এই ঘটনাটি বনী ইসরাইলের। তাদের মধ্যে একটি লোক অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী ছিল। তার কোন সন্তান ছিল না। একটি গরীব ভ্রাতুষ্পুত্র ছাড়া কোন উত্তারাধিকারী তার ছিল না। ধনী লোকটির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছিল; কিন্তু তার ঐ ভ্রাতুষ্পুত্রটির লোভ এসে গেল।
সে তার সম্পদশালী চাচাকে সময়ের পূর্বেই হত্যা করে ফেলল, যাতে সে চাচার সমস্ত সম্পদ লাভ করতে পারে। হত্যা করার পর সে চালাকি করে চাচার মৃত দেহটি অন্য এক গ্রামে নিয়ে গিয়ে কোন এক ব্যক্তির আঙ্গীনায় ফেলে দিল, যাতে তার উপর কেউ সন্দেহ করতে না পারে। সকাল হওয়া মাত্রই সে নাটকীয় ভঙ্গীমায় চীৎকার করে বলতে লাগলঃ “হত্যার প্রতিশোধ চাই, হত্যার প্রতিশোধ চাই।” সে শুধু এটা বলেই ক্ষান্ত হলো না; বরং মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর খেদমতে পৌঁছে কয়েকজন নিষ্পাপ ব্যক্তির উপর হত্যার মামলা দায়ের করে দিল।
মূসা (আলাইহিস সালাম) এই লোকগুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ প্রকাশ করল। আর তারা দলীল প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করল যে, হত্যার ব্যাপারে তারা আদৌ অবগত নয়। তাদের উপর হত্যার অপবাদ দেয়া সম্পূর্ণরূপে অবিচার ও যুলুম। তারা নিঃসন্দেহে নির্দোষ। মামলার শুনানীর পর মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর পক্ষে ফায়সালা করা কঠিন হয়ে গেল।
-
Product on saleসম্পদ গড়ার কৌশল-ঊমার সুল৳ 200.00
৳ 270.00 -
ধূলিমলিন উপহার রামাদান
উপস্থিত লোকগুলি প্রস্তাব পেশ করল যে আসনু, আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট দু’আ করি যে, তিনি যেন হত্যাকারীর পর্দা উন্মোচন করে দেন। এ প্রস্তাবটি মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট পছন্দনীয় হল। তিনি আল্লাহ তায়ালার নিকট দু’আ করার পর আল্লাহ তায়ালা নিম্নের নির্দেশ শুনিয়ে দেনঃ
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
(01:67)
তখন বনী ইসরাইল বলতে লাগলঃ হে মূসা (আলাইহিস সালাম)! আপনি আমাদের মামলার শুনানীর পর ওর মীমাংসা করার পরিবর্তে আমাদের সাথে রশিকতা করছেন? এটা কেমন কথা হলো? আমরা তো আপনার নিকট নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীর নাম ও ঠিকানা বলে দেয়ার ব্যাপারে আবেদন করেছি, আর আপনি আমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন! আচ্ছা বলুন তো হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির মামলায় গাভী যবেহ করার প্রশ্ন কোথা থেকে আসলো?
বনী ইসরাইল বড়ই অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সম্প্রদায় ছিল। আল্লাহ তায়ালার হুকুম না মানা এবং ওর উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানা প্রকারের প্রতিবাদ করা ছিল তাদের সাধারণ অভ্যাস। তারা এই হুকুমের উপরও তাদের পুরাতন অভ্যাস অনুযায়ী আমল করল। মহান আল্লাহর নিপুনতা সম্পর্কে তারা ছিল বে-খবর। তারা এটা অনুধাবন করতে পারেনি যে, তাদেরকে এই হুকুম দ্বারা কোন সাধারণ মানুষ নন; বরং নবী (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে এই হুকুমে ইলাহী শুনিয়েছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বললেনঃ
“আমি এরূপ অজ্ঞ ও মূর্খ হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ”
(01:76)
ভাবার্থ এই যে, আমি একজন নবী। এটা আমার মাহাত্মের বিপরীত যে, আমি আমার মু’মিন ভাইদের সাথে রসিকতা করব। এটা কি করে হতে পারে যে, তোমরা আমার নিকট আগমন করেছ, আর আমি এই মামলার ফায়সালা করার পরিবর্তে তোমাদেরকে আমার রসিকতার লক্ষ্য স্থল বানিয়ে নিব?
বনী ইসরাইলের যখন এই দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) যে হুকুম দিচ্ছেন তা তাঁর নিজের পক্ষ থেকে নয়; বরং এ হুকুম স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন তারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে বললঃ “আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা গাভী যবেহ করব; কিন্তু আমাদেরকে বলে দিন যে, গাভীটি কি ধরণের হবে এবং কোন্ কোন্ গুণ ওর মধ্যে থাকবে?” বনী ইসরাইল মূসা (আলাইহিস সালাম) কে গাভীটির রকম জিজ্ঞেস করে অযথা নিজেদের মামলাকে জটিল করে তুলল। তারা যদি মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর হুকুম অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ যে কোন গাভী যবেহ করত তাহলেই উদ্দেশ্য পুরো হয়ে যেত; কিন্তু তারা গাভীটি রকমের ব্যাপারে ক্রমান্বয়ে প্রশ্ন করে নিজেরাই মামলাটিকে জটিলতার মধ্যে ফেলে দিল।
সুতরাং তাদের বাজে প্রশ্নকে আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করলেন না। ফলে তিনিও তাদের মুকদ্দমাকে কঠিন করে দিলেন এবং তাদেরকে জটিলতার মধ্যে নিক্ষেপ করলেন। এসব যা কিছু হলো এর পিছনেও প্রকৃতপক্ষে একটা কৌশল কাজ করছিল।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন তাফসীরকারগণ যা কিছু লিখেছেন তার সারমর্ম নিম্নরূপঃ বনী ইসরাইলের মধ্যে একটি লোক ছিল, তার একটি মাত্র পুত্র সন্তান ছিল। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে তার একটি মাত্র বাছুরকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল। এই বাছুরটিই ছিল তার পরিশ্রমের উপার্জন এবং সারা জীবনের একমাত্র পূঁজি। জঙ্গলে পৌঁছে সে বাছুরটিকে ছেড়ে দিল এবং বললঃ “হে আমার মা’বূদ! আপনার উপর ভরসা করে আমি গাভীর বাছুরটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলাম এবং জঙ্গলেরই দায়িত্বে দিয়ে দিলাম যে পর্যন্ত না আমার শিশু পুত্রটি বড় হয় (এবং এই গাভীটির মালিক হয়ে যায়)।” গাভীটি জঙ্গলে ঘুরতে ফিরতে শুরু করে।
গাভীটি সবেমাত্র যৌবনে পদাপর্ণ করেছিল। মানুষকে দেখামাত্রই সে পালিয়ে যেত। কিছুদিন পর ঐলোকটির মৃত্যু হয়ে গেল। উত্তরাধিকারীরূপে সে স্ত্রী এবং একটি নাবালক ছেলে রেখে গেল। পিতার মৃত্যুর পর ছেলেটির লালন-পালনের দায়িত্ব মাতার উপর অর্পিত হল। মাতা স্বীয় শক্তি অনুযায়ী ছেলেটির লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করল। সময়ের সাথে সাথে ছেলেটিও বড় হয়ে উঠল। এমন একদিন এসে গেল যে, ছেলেটি যৌবনে পদার্পণ করল। সে তার মাতার একান্ত অনুগত ও সেবাকারী ছিল।
এই নবযুবকটি রাতকে তিনভাগে ভাগ করে রেখেছিল। রাতের এক তৃতীয়াংশ সে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দিত, এক তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কাটাত এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ মাতার সেবায় অতিবাহিত করত। তার প্রতিদিনের অভ্যাস ছিল যে, সকাল হওয়া মাত্রই সে জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে পড়ত। জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটতো এবং ওগুলি পিঠে উঠিয়ে নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রী করত। এতে যা উপার্জন হত ওর মধ্য হতে এক তৃতীয়াংশ আল্লাহর পথে দান করে দিত, এক তৃতীয়াংশ পানাহারে খরচ করত এবং বাকী এক তৃতীয়াংশ এনে মাতার হাতে রেখে দিত।
একদিন মাতা ছেলেকে বললেনঃ “তোমার পিতা উত্তরাধিকারী সূত্রে একটি গাভী রেখে গেছেন। গাভীটি অমুক জঙ্গলে রয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তোমার পিতা ওকে আল্লাহর উপর ভরসা করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, যখন তুমি বড় হবে তখন ওর মালিক তুমি হয়ে যাবে। সুতরাং তুমি ঐ জঙ্গলে যাও এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম), ইসহাক (আলাইহিস সালাম), ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম)-এর রবের নিকট দু’আ কর যে, তিনি যেন ঐ গাভীটি তোমাকে ফিরিয়ে দেন। আর হ্যাঁ, ওর নিদর্শন এই যে, যখন তোমার দৃষ্টি ওর উপর পড়বে তখন তুমি এরূপ অনুভব করবে যে, যেন ওর চামড়া হতে সোনালী আলোকোচ্ছটা বেরিয়ে আসছে!
যুবকটি মাতার নির্দেশ পালনার্থে জঙ্গলের দিকে চলে গেল যে জঙ্গলের কথা মাতা বলে দিয়েছিলেন। এদিক ওদিক অনুসন্ধানের পর যুবক ঐ গাভীটিকে দেখতে পেল।
সে গাভীটিকে ডাক দিয়ে বলেঃ “আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম), ইসহাক (আলাইহিস সালাম), ইয়াকুব (আলাইহিসলাম)-এর রবের নাম দিয়ে তোমাকে আমার নিকট ডাকছি।”
এ ডাক শুনা মাত্রই গাভীটি যুবকটির দিকে দৌড় দিল এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই যুবকটির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। যুবকটি গাভীর ঘাড়ে রশি ফেলে দিল এবং ওকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়ে গেল।
ঐ সময় আল্লাহ তায়ালা গাভীটির যবান খুলে দিলেন এবং সে যুবকটিকে সম্বোধন করে বললঃ “হে মাতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী যুবক! তুমি আমার উপর সওয়ার হয়ে যাও। এর ফলে আমাকে নিয়ে যাওয়া তোমার পক্ষে সহজ হবে।” গাভীটির কথা শুনে যুবকটি বললঃ “আমার মাতা আমাকে তোমার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করেছেন। তিনি শুধু এটুকুই বলেছেনঃ “গাভীটিকে ওর ঘাড় ধরে নিয়ে আসবে।” তার একথা শুনে গাভীটি বললঃ “বনী ইসরাইলের রবের কসম! তুমি যদি আমার উপর সওয়ার হয়ে যেতে তবে তুমি কখনই আমাকে বশে আনতে পারতে না। চল, এখন তুমি যদি পাহাড়কেও তোমার সাথে চলার নির্দেশ দাও তবে সেও তার মূলকে আলগা করে দিয়ে তোমার সাথে চলতে শুরু করবে। এটা তোমার মাতার সাথে তোমার সদ্ব্যবহারের প্রতিদান।”
যুবকটি গাভীটিকে নিয়ে মাতার খেদমতে হাজির হয়ে গেল। মাতা পুত্রকে বললেনঃ “এটা তুমিও জান যে, তোমার নিকট এই গাভীটি ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। তুমি তো দিনের বেলায় কষ্ট করে জঙ্গলে কাঠ কেটে থাক এবং রাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাক। যাও, এই গাভীটিকে বাজারে বিক্রী করে এসো। এর ফলে তোমার আর্থিক অবস্থা কিছুটা স্বচ্ছল হবে।” ছেলে জিজ্ঞেস করলঃ “আম্মা! আমি গাভীর মূল্য কত নিব?” মাতা বললেনঃ “এর মূল্য চাইবে তিন স্বর্ণমুদ্রা, তবে আমার অনুমতি ছাড়া বিক্রী করবে না।” যুবক গাভীটি নিয়ে বাজারে চলে গেল। সে গ্রাহকের অপেক্ষা করছিল।
ঐ সময়েই একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে প্রকাশিত হলেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাকে যুবকটির পরীক্ষা নেয়ার জন্যে পাঠিয়েছিলেন যে, সে পুরোপুরিভাবে মাতার অনুগত থাকছে, না কি নিজের স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন তো বটেই; কিন্তু তিনি বান্দাকে খুটিনাটিভাবে পরীক্ষা করে দেখতে চান!
মানবরূপী ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেনঃ এ গাভীটি কত মূল্যে বিক্রী করবেন? নব যুবকঃ তিন স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে, তবে এর পরেও আমি আমার মাতাকে জিজ্ঞেস করতে চাই।” মানবরূপী ফেরেশতাঃ আমি ছয়টি স্বর্ণমুদ্রা দিচ্ছি, সুতরাং মাতাকে জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজন নেই। স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে নিন এবং গাভীটি আমাকে দিয়ে দিন! নব যুবকঃ যদি আপনি আমাকে এই গাভীটির সমপরিমাণ স্বর্ণও প্রদান করেন তবুও আমি মাতার পরামর্শ ছাড়া আপনার নিকট এ গাভীটি বিক্রী করব না। মানবরূপী ফেরেশতাঃ তাহলে যান এবং মাতার সাথে পরামর্শ করার পর চলে আসুন!
যুবকটি বাজার হতে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়ে গেল। সে তার মাতার নিকট সমস্ত কথা শুনিয়ে দিল যে কথাগুলি মানবরূপ ফেরেশতার সাথে হয়েছিল। গাভীটির মূল্য সম্পর্কেও সে তার মাতাকে বলল। মাতা বললেনঃ “যাও, গাভীর মূল্য ছয়টি স্বর্ণমুদ্রাই বলবে; কিন্তু বিক্রয়ের পূর্বে আমাকে জিজ্ঞেস করবে।” যুবকটি গাভীটি নিয়ে বাজারে পৌঁছে গেল। তখন দেখল যে, ঐ
মানবরূপী ফেরেশতাটিই পুনরায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বললেনঃ “মাতার সাথে পরামর্শ করে এসেছেন তো?” নব যুবকঃ হ্যাঁ, আমি মাতার সাথে পরামর্শ করেছি এবং তিনি ছয়টি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে গাভীটি বিক্রী করতে বলেছেন; কিন্তু বিক্রী করার পূর্বে তাঁর সাথে আমাকে পরামর্শ করতে বলেছেন।
মানবরূপী ফেরেশতাঃ আমি আপনাকে বারটি স্বর্ণমুদ্রাই দিতে প্রস্তুত আছি; কিন্তু গাভী আমি এখনই চাই। মূল্য নিয়ে নিন এবং গাভী আমাকে দিয়ে দিন। মাতাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই।
নব যুবকঃ না, এটা কখনই হতে পারে না। আমি মাতাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কোন মূল্যেই গাভীটি বিক্রী করতে পারব না।নব যুবকটি বাজার হতে ফিরে আসল এবং বাজারের সমস্ত কথেপকথন মাতাকে শুনিয়ে দিল। এসব কথা শুনে মাতা ছেলেকে বললেনঃ “প্রকৃতপক্ষে তোমার নিকট আগমনকারী ব্যক্তিটি মানবরূপী ফেরেশতা। তিনি তোমাকে পরীক্ষা করতে চান। এবার যদি তিনি তোমার নিকট আগমন করেন তবে তুমি তাঁকে প্রশ্ন করবেঃ “আমরা এই গাভীটি বিক্রী করব, না কি করব না?”
নব যুবকটি মাতার নির্দেশ পালন করল। বাজারে যখন ফেরেশতা তার নিকট গ্রাহকরূপে আগমন করলেন তখন যুবকটি তাঁকে মাতার বলে দেয়া প্রশ্নটি করল? ফেরেশতা তখন বললেনঃ “আপনি আপনার মাতার নিকট গমন করুন এবং তাঁকে বলুন যে, তিনি যেন গাভীটি বিক্রী না করে এখনও নিজের কাছেই রেখে দেন। কেননা, মূসা বিন ইমরানের (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট একজন নিহত ব্যক্তির মামলা দায়ের হবে। ঐ লোকগুলি এই গাভীটি অতি উচ্চ মূল্যে ক্রয় করবে। ফেরেশতার পরামর্শ অনুযায়ী ঐ গাভীটি বিক্রী করা হল না। আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলের মাধ্যমে ঐ গাভীটিকে উচ্চ মূল্যে বিক্রী করিয়ে নিয়ে ঐ অনুগত ছেলেটিকে উত্তম বিনিময় দান করতে চাচ্ছিলেন। সুতরাং হলোও তাই।
বনী ইসরাইল আল্লাহর নবী মূসা (আলাইহিস সালাম) কে গাভীর রকম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে অযথা নিজেদের উপর বোঝা চাপিয়ে নিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যে রকম ও ঢং এর গাভী যবেহ করার নির্দেশ দেন ঐরূপ গাভী সারা দুনিয়ার মধ্যে শুধু একটি মাত্র লোকের নিকটই ছিল। ঐ লোকটি ছিল এই নব যুবকটিই, যে জীবনে কখনও স্বীয় মাতার অবাধ্য আচরণ করেনি; বরং তার সমুদয় সময় মাতার আনুগত্যেই অতিবাহিত হত!
মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন গাভীটির রকম সম্পর্কে বনী ইসরাইলকে জানিয়ে দিলেন তখন তারা বহু জায়গায় অনুসন্ধান করার পর এই নব যুবকের নিকটই তাদের চাহিদার গাভীটি পেয়ে যায়।
গাভীটির নির্ধারিত মূল্য এই হলো যে, গাভীটির ওযনের সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা গাভীর মালিককে দেয়া হবে। সুতরাং তাই হল। যখন গাভীটিকে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর খেদমতে আনা হল, তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা অনুযায়ী গাভীটির গোশত কেটে নিয়ে ঐ গোশতকে মৃত ব্যক্তির দেহের উপর মেরে দেয়ার নির্দেশ দেন।
গোশত নিহত ব্যক্তির দেহের উপর মেরে দেয়া মাত্রই তার দেহ হতে রক্ত বেরিয়ে পড়ল এবং সে জীবিত হয়ে গেল। ঐ সময় সে বলে দিলঃ “আমাকে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র হত্যা করেছে।” এ বলেই সে ঐ জায়গাতেই পড়ে গিয়ে মারা গেল। সুতরাং হত্যাকারীকে তার উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করে দেয়া হল।
এই ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ সূরা বাকারার ৬৭-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন।
https://www.youtube.com/embed/rdVveHYMjJY?si=dPrf9QrzgxvOveqG