সুরা ইয়াসিনঃ এক অনন্য ঈমান সঞ্জীবনী সুরা Leave a comment

সুরা ইয়াসিনকে আমরা কুরআনের ক্বলব বা হৃৎপিণ্ড হিসেবে সবাই কমবেশি জানি। আশ্চর্য সুরা হচ্ছে এই সুরা ইয়াসিন। বিশ্বে যতো মুসলমান আছে, তাদের অনেকেরই এই সুরা মুখস্ত আছে। ছোট সুরা বাদ দিয়ে যদি বড় সুরার কথা বলি, তাহলে সারা পৃথিবী ব্যাপি এই সুরা ইয়াসিন ই সবচেয়ে বেশী পড়া হয়।
এই সুরা মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরাকে ঘিরে অনেক যঈফ এবং জাল হাদিস রয়েছে। তবে, এই সুরার প্রধান বিষয়বস্তু হল মহান আল্লাহতাআলার তাওহীদ বা একত্ববাদ। তিন ভাবে আল্লাহর তাওহীদকে এই সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরা তিলাওয়াত করার সময় আমাদের অন্তরে মহান আল্লাহ পাকের তাওহীদকে জাগ্রত রেখে তিলাওয়াত করা উচিৎ। এ কারণে এ সুরার তাফসীর পড়া এবং জানা খুবই জরুরী। সুরা ইয়াসিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিচে বলা হলঃ

১।    কোন ব্যাপারে বা মতামতে সংখ্যাধিক্য মানেই সেটা সঠিক; এটা সম্পূর্ণ ভুল। 
এই সুরায় একটি শহরের ঘটনা এসেছে যে শহরে তিন জন নবী প্রেরিত হয়েছিলেন। কুরআনে সেই হহর বা নবীগণের নামের ব্যাপারে কোন বর্ণনা আসেনি। আর তাদের নাম জানাও তেমন গুরুত্বপুর্ণ নয়। কারণ আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ঘটনাটি থেকে শিক্ষা নেয়া। 
ঘটনার বর্ণনানুসারে, সেই তিনজন নবী শহরের সমস্ত মানুষকে এক আল্লাহর তাওহীদের প্রতি আহ্বান করে। কিন্তু সমগ্র শহরবাসী সেটা প্রত্যাখ্যান করে, শুধু একজন ছাড়া। কোন কোন তাফসীর গ্রন্থে তার নাম এসেছে হাবিব নাজ্জার। সে ই শুধু নবীদের কথার উপর ঈমান আনে। সেই সাথে অন্য শহরবাসীদেরকেও তাওহীদের পথে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিতে থাকে। এতে শহরবাসী ক্ষেপে যায় এবং সবাই মিলে তাঁকে হত্যা করে। কিন্তু মহান আল্লাহপাক তাঁকে তার এই আমলের পুরস্কার স্বরুপ জান্নাতে দাখিল করেন। 
এখানে যে শিক্ষা আমরা পাই, তাহলো, অধিকাংশ মানুষ কোন একটা বিষয়কে সত্য বললেও তা সত্য না ও হতে পারে। সবাই সঠিক বলছে বলেই সেটা সঠিক হবে, তা কখনই না। আমাদের উচিৎ হবে, সত্যকে আকড়ে ধরে রাখা। তা যাই হোক না কেন। প্রয়োজনে সত্যের পথে যদি একাই চলতে হয়, তবে একাই চলতে হবে। 
আজকের সমাজে, অনেকেই ইসলামকে মডারেট করে একটা অন্য ইসলামে পরিণত করে ফেলছে। আজকের মডারেট ইসলামে নামায না পড়লে, দাঁড়ি না রাখলে, পর্দা না করলে, ঘুষ খেলে, সুদ খেলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আসল ইসলাম এভাবে পরিবর্তন হওয়া কখনই সম্ভব না। অন্যরা যাই করুক আ কেন? আমাদেরকে সঠিক ইসলামের শিক্ষা নিয়েই জীবন অতিবাহিত করতে হবে। 
২।    আখিরাতের সাফল্যই আসল সাফল্য, দুনিয়াতে সাফল্য না ও আসতে পারে। 
বর্তমানে আমাদের সমাজে নানারকমের আত্নোন্নয়ন মূলক প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। অনেকেই পয়সা খরচ করে এই প্রোগ্রাম গুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকে। কী শেখানো হয় এসব প্রোগ্রামে? শেখানো হয়, মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রনকর্তা, মানুষ নিজে চাইলে তার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে এবং যা খুশী হাসিল করতে পারে। কিন্তু মুসলিম হিসেবে, আমরা এই ধারণাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করি। 
হ্যাঁ, আমরা আমাদের লক্ষ্য ঠিক করে সেটার জন্য পরিশ্রম করি। যতোরকমের উপায় আছে তা অবলম্বন করি। কিন্তু আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি, সাফল্য আসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনিই আমাদের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রনকর্তা। আমাদের ভবিষ্যৎ মহান আল্লাহর কাছেই। 
এই সুরার ঘটনাতে, শহরবাসীকে বারংবার সদুপদেশ দেয়া সত্ত্বেও শহরবাসী সেই নবীদের মানেনি। উল্টো আল্লাহর পথে আহবানকারী সেই ব্যক্তিকে ও তাঁরা হত্যা করেছে। তাদের তক্বদীরে যা লেখা ছিল তাই ঘটেছে।
দুনিয়ার বিচারে তাঁরা কিছুই পায়নি। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা পরিণামে আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভ করে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। 
মাঝে মাঝে আমরা আমাদের প্রকৃত লক্ষ্যস্থল থেকে দূরে সরে যাই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হল আখিরাতে জান্নাত পাওয়া। জান্নাতই একমাত্র সাফল্য। কাজেই দুনিয়াতে আমরা যতো কষ্ট, দুঃখ এবং পরীক্ষায় আমরা থাকিনা কেন সেটা ক্ষণস্থায়ী। জান্নাতের সুখ শান্তি স্থায়ী। তাই আমাদের উচিৎ হবে আমাদের ভাগ্যে সন্তুষ্ট থাকা এবং জান্নাতের জন্য চেষ্টা সংরাম করা।  
৩.    আমাদের চারপাশেই আল্লাহর নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। 
সুরা ইয়াসিনের অধিকাংশ স্থানে মহান আল্লাহপাকের নিদর্শন নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আমাদের সমাজে এখন নাস্তিক্যবাদ অনেক বেশী প্রবল আকার ধারণ করে আছে। এর একটা বড় কারণ হল তথ্যপ্রযুক্তিতে উৎকর্ষ সাধন হওয়া। মানুষ তার চারপাশে ইলেক্ট্রনিক গেজেট দিয়ে এমন ভাবে আবদ্ধ, যে মহান আল্লাহপাকের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার ফুরসৎ নেই।  

আমাদের উচিৎ ব্যস্ত জীবনে থেকে কিছু সময় বের করে মহান আল্লাহপাকের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। সবচেয়ে সহজ উপায় হল অন্ধকার রাতে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে দেখা। আল্লাহ কত সুন্দর আকাশকে সাজিয়েছেন! আমরা যতই সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো, ততোই আমাদের ঈমান শক্ত হতে থাকবে।  আমাদের চারপাশেই মহান আল্লাহর নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমাদের শুধু এটুকুই কর্তব্য যে আমরা একটু অবসর হব এবং আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। 

                                                                                                                         (সংগৃহিত এবং সংকলিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close