সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কতটুকু? Leave a comment

ঘটনাটি চীন দেশের। সেই সময়ের ঘটনা এটা যে বার ভয়াবহ ভুমিকম্পে চীনের বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল।

ভুমিকম্প কবলিত এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজ চালাতে চালাতে তাঁরা এখন একটা ছোট বাড়ির ধংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে। বাড়িতে এক যবতী মহিলা তাঁর কয়েকমাস বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে বসবাস করতেন। উদ্ধারকর্মীদের টিম লিডার তাঁর লোকজন নিয়ে ভিতর থেকে পলেস্তর, রড, ইট, পাটকেল সরিয়ে প্রাণের চিহ্ন খুজে বেড়াচ্ছে। অতঃপর সেই যুবতীর খোঁজ মিলল। ভাঙ্গা ছাদের অংশবিশেষ এর নিচে তাঁর নিথর দেহটি চাপা পড়ে আছে। টিম লিডার ভালভাবে যুবতীর দেহ পরীক্ষা করে বুঝল, পাখী আর খাঁচায় নেই, উড়াল দিয়েছে অজানা উদ্দেশ্যে।

সে তাঁর দলবল নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ কি মনে করে সে থেমে গেল। তাঁর মনের গহীনে কোন এক জায়গায় কিছু একটা খচখচ করছিল। সে আবার যুবতীর নিথর দেহের কাছে ফিরে গেল। মেয়েটা কেমন যেন অদ্ভুত অবস্থায় আছে। নামাযে সিজদা দিলে যেরকম লাগে সেরকম। হাঁটু ভাজ করে, উপুর হয়ে মাথা নীচু করে কি যেন জাপটে ধরে আছে। মনে হচ্ছে, কিছু আগলে রেখেছে। লোকটি আরো কাছে গিয়ে ভালভাবে খেয়াল করল।

লোকটি চীৎকার দিয়ে বলে উঠল, “একটা বাচ্চা, একটা বাচ্চা আছে ওর নীচে!” সবাই তড়িঘড়ি করে ইট, পলেস্তর সরাতে লাগলো। মেয়েটিকে সরিয়ে দেখল, তাঁর বুকের নীচে ছোট এক বাচ্চা শুয়ে ঘুমুচ্ছে। বাচ্চাটা একটা ফুলের নক্সা করা কম্বল দিয়ে জড়ানো। চেহারায় হাল্কা ধুলো ছাড়া আর বিন্দুমাত্র আঘাতের নিশানা নেই।

ভুমিকম্প হবার সময় মেয়েটি তাঁর শরীর দিয়ে বাচ্চাটাকে আগলে রেখেছিল যাতে কোন আঘাত না লাগে। ফলে ছাদ ভেঙ্গে যখন নিচে পড়ে তখন বাচ্চার কিছু হয়না, তবে মেয়েটার ঘাড় এবং মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়।

ডাক্তার এসে দ্রুত বাচ্চাকে পরীক্ষা করে দেখল, সে সুস্থ আছে, তখনও ঘুমুচ্ছে। হঠাৎ বাচ্চার ফুলেল কম্বল এর ভেতর থেকে একটা মোবাইল পেল তাঁরা। মোবাইলের স্ক্রীনে কিছু একটা লেখা ছিল। তাতে লেখা ছিল,

“আমার সোনা মানিক! তুমি যদি বেঁচে যাও, তাহলে এই মায়ের কথা মনে রেখ; কারণ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি!”
ডাক্তার কেঁদে দিল ম্যাসেজটি পড়ে। মোবাইলটা সবার হাতে হাতে ঘুরছে। যে ই পড়ছে, সে চোখের পানি আটকে রাখতে পারছেনা।

এমনই হয় মা এবং তাঁর সন্তানের ভালবাসা।

হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত,

“রাসুল (সাঃ) এর কাছে এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে রাসুল (সাঃ)! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার বাপ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)”

রাসুল (সাঃ) বলেন,

“মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত রয়েছে।” (আহমদ, নাসাঈ)

এক নেককার লোক তাঁর সন্তানকে বলল, “বাবা, যাও জান্নাত থেকে কিছু মাটি নিয়ে আসো।” কিছুক্ষণ পর ছেলেটি মাটি নিয়ে বাবার কাছে এসে বলল, “জান্নাতের মাটি নিয়ে এসেছি।” বাবা জিজ্ঞেস করল, “কোথায় পেয়েছ?” ছেলেটি বলল, “আম্মুর পায়ের নীচ থেকে কুড়িয়ে এনেছি।”

নেক বাবা মা, নেক সন্তান এমনই হয়। এই সম্পর্ক কী দুনিয়ার কোন কিছু দিয়ে কেনা সম্ভব?!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close