বিয়েকি শুধু চারটি গূণ দেখেই করতে হয়! …… Leave a comment








আমি একজন সাইক্লোজিস্ট। একজন সাইক্লোজিস্ট হিসেবে একবার  তুর্কিতে আমার কাছে একজন  ভাই  এসেছিলেন, তার বিয়ের ব্যাপারে  পরামর্শ  নিতে। তিনি এক অদ্ভুত সমস্যায় ছিলেন। তার বিয়ের কথা চলছিল তখন।  বাসা থেকে সবাই তার জন্য একজন দ্বীনি  মহিলা   পছন্দ করে রেখেছে। এখন শুধু সেই ভাইয়ের মতামত বাকি। দুই পরিবারের মাঝে তিন তিন বার সামনাসামনি  দেখা সাক্ষাৎ হয়।  মেয়েটি  ধার্মিক  এবং একজন ভালো বংশের মেয়ে। এজন্য ওই ভাইয়ের পরিবার থেকেও ভাইএর উপর বেশ চাপ আসছিল। সবাই  খুব দ্রুত মতামতের অপেক্ষায় ছিল।  কিন্তু সমস্যা হয়েছিল অন্যজায়গায়। ভাইএর মেয়েটিকে ভালো লাগেনি। আমি ওনাকে প্রশ্ন করলাম, “মেয়েটির কোন কোন বিষয় আপনার ভালো লেগেছে?” উনি বললেন যে মেয়েটি ধার্মিক এবং বংশও ভালো। আমি জিগ্যাসা করলাম, “এছাড়া আর কি ভালো লেগেছে?”

প্রশ্নটা করার পর লক্ষ্য করলাম, তার  উদ্বিগ্ন চেহারা, বুঝতে পারছেনা যে কি করা উচিৎ, বিয়ে করা উচিৎ না উচিৎ না।   আচম্‌কা  তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি কি বিয়েটা করেই ফেলবো?’

তার কথা শুনে আমি যেন শক্‌ খেলাম। বিয়ে হল সারা জীবনের জন্য একটা চুক্তি। এই চুক্তি রক্ষা করার ক্ষেত্রে দম্পতির পরস্পরের মাঝে প্রয়োজন আকর্ষন, ব্যক্তিত্তের  সমতা এবং সমঝোতা, যার কোনটাই সে ভাই অমুক মেয়েকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে অনুভব করেন নাই। সেই ভাই সেটা না বুঝেই বিয়ের কথা চিন্তা করছিলেন। বিয়ের ক্ষেত্রে একটা প্রসিদ্ধ হাদীস হলঃ

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল পাক (সাঃ ) বলেনঃ “চারটি বিষয় দেখে একজন মহিলাকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, বংশ , সৌন্দর্য এবং দ্বীনদারী।অতএব, বিয়ের সময় তোমরা দ্বীন্দারীকেই প্রাধান্য দিবে, নইলে সফলতা লাভ করতে পারবেনা।” (কিতাব#৬২, হাদীস #২৭)

আমার মতে, এই হাদীসটি আমরা  ভুল বুঝি। কারণ আমরা শুধুমাত্র দ্বীনকেই মাথায় রাখি, আর বাকি তিনটি বৈশিষ্ট্য ভুলে যাই, মনে রাখিনা।

যেই ভাইটি আমার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছিলেন, উনি ভেবেছেন শুধু দ্বীনোদারি দেখেই একজন কে বিয়ে করতে হবে, অন্য কিছু দেখার দরকার নাই। কিন্তু , বাস্তবতা হল, দম্পতিদের মাঝে যদি ব্যক্তিত্তের সমঝোতা বা সামঞ্জস্য না থাকে তাহলে শুধু দ্বীনোদারি দিয়ে বিয়ে টেকানো যায় না।যেমনটি আমরা দেখতে পাই হযরত যায়েদ (রাঃ) এবং যয়নব (রাঃ) এর জীবন থেকে। তাঁরা দুজনেই অনেক বিখ্যাত সাহাবী ছিলেন, কিন্তু তাঁদের দাম্পত্তজীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
আমার বহুদিনের অভিজ্ঞতায় আমি এমন অনেক মুসলিম দম্পতি দেখেছি, যারা এধরনের সমস্যায় ভুগছেন।বিয়ে করার সময় শুধু ই আবেগের বশে বিয়ে করেছেন অথবা নিজের চাওয়াকে ভালোভাবে না বুঝে , অন্যদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করেছেন। কিন্তু সময়ের আবর্তনে পেয়েছেন শুধু কষ্ট এবং ব্যর্থতা।  এই ভাইএর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে  সেটা হল,  তিনি তার পরিবার এবং সেই মেয়েটিকে না করে দিলে  মেয়েটি সহ তার পরিবার সবাই কষ্ট পাবে ভেবে বিয়ের জন্য রাজী হয়ে যেতে চেয়েছেন।কিন্তু সেই ভাই এটা চিন্তা করেননি যে,  বিবাহিত জীবনের কোন একসময় যদি তার মনে হয়, যে তার এই বিয়ের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এবং তিনি এজন্য তালাক দিয়ে দেন তাহলে তা কতটুকু কষ্টকর হবে সেই বোনের জন্য!

তাই বিয়ের ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ হলঃ

  • কাওকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে কখনই লজ্জা, ভয় বা চাপকে প্রাধান্য দিবেননা। এতে আপনার দাম্পত্য জীবন ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাই বেশী। দিনের শেষে ভোগান্তি হবে আপনারই। আপনার দ্বীন, আপনার ঐতিহ্য, আপনার পরিবার এরা কেউই ভুগেবনা।
  • শুধু দ্বীনদারি নয়, এমন কাউকে বিয়ে করুন যার মাঝে চারটি বৈশিষ্ট্যই আছে। এতে  আল্লাহ চাইলে আপনার দাম্পত্য জীবন সফল এবং দীর্ঘসময় টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী।
  • যদি শুধু দ্বীন ই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এমন কাউকে বিয়ে করবেন না যার মাঝে দ্বীনদারী নাই, যদিও বাকি  তিনটি গুন উপস্থিত থাকে।
  • উপোরোক্ত হাদীসটি বিয়ের গাইড হিসেবে ব্যবহার করুন, সর্বজনবিদিত নীতি হিসেবে নয়। কারণ ,আমরা অনেকেই  উপরের চারটি গুন ছাড়াও পছন্দ, ভালোবাসা, রসায়ন ইত্যাদির কারনেও বিয়ে করে থাকে।
  • বিয়ে করার ক্ষেত্রে শুধু পাত্র বা পাত্রীর দ্বীনদারী নয়, বরং মহান আল্লাহ্‌র উপরেই ভরসা করা উচিৎ।  এমন অনেক উদাহরন আছে যেখানে স্বামী বা স্ত্রীর আবেশে অপরজন পুরোপুরী দ্বীনের পথে চলে এসেছেন। আল্লার তাওফীক তো  আছেই, এছাড়াও যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তা হলো, পরস্পরের ব্যক্তিত্তের সামঞ্জস্য বা ভারসাম্য।


  • কোন কোন সময়, কিছু মানুষ বিয়ের বিষয় সামনে এলে  নিজের দ্বীনদারী ভাব ফুটিয়ে তোলে, কারণ  তাঁরা জানে যে, অনেকের কাছেই বিয়ে দেয়া বা বিয়ে করার ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের দ্বীনদারীর বিষয়টি লিস্টের এক নম্বরে থাকে। এজন্য বিয়ে করার আগে যে কারোরই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যাকে বিয়ে করছেন এবং যে ফ্যামিলিতে বিয়ে করছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত  খোঁজখবর নিয়েই আগানো উচিৎ।
  • সবশেষে যে বিষয়টি আমি বলব, তা হলো, সময় নিন, ধীরে সুস্থ্যে আগান।  যদি বিয়ে করার সময় খোজখবর নিতে অনেক সময় লেগে যায়, সময় লাগান। কিন্তু , ভুলেও তাড়াহুড়া করবেননা। হয়ত পারিপার্শ্বিক অনেক চাপ আসবে, কিন্তু ধৈর্য্য হারা  হবেননা। যদি কখনও কোন পরিবারকে বিয়ের কথাবার্তা চলা কালে খুব তাড়াহুড়ো করতে দেখা যায়, তবে  সেটি সংশয়ের  বিষয় বটে।  
———সংগৃহীত


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close