খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ এর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা-২২৩ হিজরী Leave a comment

খলিফা মোতাসিম বিল্লাহর জন্ম

মুসলিম জাতির এক সময়ের খলিফা, মুসলিমদের জন্য অভিভাবক আবু ইসহাক ইবনে হারুনুর রশিদ ১৮0 হিজরীতে যখন রোম দেশ অভিমুখে যাত্রা করেন, তখন সীমান্ত এলাকার যাবতারা নামক স্থানে বারেদা নাম্নী এক ক্রীতদাসের গর্ভে মোতাসিম বিল্লাহ ভূমিষ্ঠ হন। হারুনুর রশীদ তার এই পুত্রকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি তার সন্তানদের মধ্যে কোনোকিছু ভাগ বন্টন করলে সবচেয়ে বড় অংশটা দিতেন মোতাসিমকে।

তাঁর যোগ্যতা

মোতাসিম বিল্লাহ লেখাপড়ায় উৎসাহী ছিলেন না। বাল্যকালের বেশিরভাগ সময় খেলাধুলায় কাটিয়ে দিতেন। এ কারণে তার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে তিনি একেবারে নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু এটি সত্য নয়, বরঞ্চ সত্য কথা হলো তিনি অল্প পড়ালেখা জানতেন। নিজের নাম লেখতে পারা, এ ধরণের মামুলি পড়ালেখা তার ছিল। কিন্তু যেহেতু তিনি শাইখ এবং জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিদের সাহচর্যে মানুষ হয়েছেন এবং হারুন ও মামুনের আমলের জ্ঞানচর্চার মজলিস সমূহের উচ্চাঙ্গের একাডেমিক আলোচনা সর্বদাই শুনেছেন ও দেখেছেন, তাই তার জানাশোনার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ গড়নের পালোয়ান এবং বীরপুরুষ সেইসাথে উঁচুদরের মানবিক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।

তাঁর শারীরিক শক্তি সম্পর্কে

ইবনে আবু দাউদ বলেন মুতাসিম প্রায় সময়ই তার বাহু আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলতেন এতে কামড় বসাও। আমি সজোরে ডাক দিয়ে কামড় বসাতাম। কিন্তু মোতাসিম বলতেন, আমি তো একটুও টের পাচ্ছি না। আমি আবার কামড় দিতাম। কিন্তু তাতে ও কোন কাজ হতোনা। আমার দাঁত কেন, ওখানে তো বল্লমের আঘাত আসতো। মোতাসিম বিল্লাহ দুই আঙ্গুলের চাপ দিয়ে হাতের কব্জির হাড় ভেঙে দিতে পারতেন।

সাহিত্য প্রীতি

মুতাসিম কখনো কখনো নিজে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন। কবিদেরকে তিনি অত্যন্ত সমাদর করতেন। খালকে কুরআন মাসালা নিয়ে তিনিও তাঁর ভাই মামুনের মত পাগলামিতে লিপ্ত ছিলেন। মুতাজিলাদের আকীদা পোষণ করতেন। সেজন্য তিনি অনেক আলেম ও জ্ঞানী গুণী কে কষ্ট দিয়েছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল কে এ প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালান।

একটি ঐতিহাসিক ঘটনা

খলিফা মোতাসিম ছিলেন রণকৌশলে পারদর্শী। আকীদার ক্ষেত্রে মুতাজিলাদের দিকে তিনি ঝুকে থাকলেও মুসলিম উম্মাহর প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অনস্বীকার্য। সেই স্বর্ণালী যুগের খলিফারা মনে হয় এমনই ছিলেন। মুসলিম সৈন্যরা যখন রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল তখন রোম সম্রাট নওফেল একদা যাবাত্রা নামক স্থানে রাতের বেলা আক্রমণ চালায়। সেখানে প্রতিরোধকারী পুরুষদের কে হত্যা করে এবং নারী ও শিশুদের কে বন্দি করে নিয়ে যায়। এরপর সে মালাতিআর দিকে অগ্রসর হয় এবং সেখানেও একই রকম ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পরবর্তীতে ২২৩ হিজরী ২৯ রবিউস সানি মাসে খলিফা মোতাসিম এর কাছে জিবাতরা ও মালাতিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের সংবাদ আসে। সংবাদ বাহক তাকে একটি বিশেষ ঘটনার কথা ও জানায়।

কি সেই ঘটনা

ঘটনাটি হল, রোমান সৈন্যরা আক্রমণ চালিয়ে খুব নিষ্ঠুর হবে পুরুষদেরকে হত্যা করে এবং নারীদেরকে বন্দি করে। বন্দী করার সময় জনৈক হাশেমী বংশের এক রমণীকে যখন রোমান সৈন্যরা টানাহেঁচড়া করে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তার শ্রীলতাহানি ঘটাচ্ছিল তখন সেই নারী চিৎকার করে আর্তনাদ করে বলছিল, হে মোতাসিমা! হে মোতাসিমা! ঘটনা শুনে লাব্বাইক লাব্বাইক বলে খলিফা মোতাসিম তৎক্ষণাৎ সিংহাসন থেকে উঠে ঘোড়ার উপর আরোহন করলেন। রণ দামামা বাজিয়ে তৎক্ষণাৎ যাত্রা শুরু করলেন। বিশাল সৈন্যবাহিনী ও যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ সেনাপতি সহযাত্রী হিসেবে নিয়ে তিনি সেই এলাকা আক্রমণ করে তাদেরকে বিজিত করলেন এবং অপরাধীদেরকে মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে শাস্তি দেন। বহুসংখ্যক রোমান সেখান থেকে পালিয়ে যান বাঁচায়। এই ছিল খলীফাতুল মুসলিমীন এর উম্মাহর প্রতি দরদ। সামান্য এক মুসলিম নারীর আহবানে পুরো সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তিনি আক্রমন করে বসলেন এবং প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়লেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

২২৭ হিজরীর ২০ রবিউল আউয়াল এ মোতাসিম বিল্লাহ ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ওয়াসেক বিল্লাহ আব্বাসী সিংহাসনে আরোহন করেন। সাধারন জনগন নতুনভাবে তার হাতে বায়াত হন। মোতাসিম এর জানাজার নামাজের ইমাম ছিলেন ওয়াসেক বিল্লাহ।

খালকে কুরআনের মত পাগলামি খলিফা মোতাসিম বিল্লাহর মগজকে আচ্ছন্ন করে না রাখলে, তাকে আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ খলিফা বলেও অভিহিত করা যেত। কারণ তাঁর আমলে আব্বাসীয় বংশের সমধিক বৃদ্ধি ঘটেছিল।

আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে কোন নফল নামায পড়িতে অভ্যস্ত কিন্তু তাহার উপর ঘুমের প্রভাববশত সে নামায আদায় করিতে পারে নাই, তবে আল্লাহ্ তা’আলা তাহাকে তাহার নামাযের সওয়াব প্রদান করিবেন, আর নিদ্রা হইবে তাহার জন্য সদকা (অর্থাৎ নামাযের জন্য তাহাকে হিসাব দিতে হইবে না, উপরন্তু নিয়ত করার সওয়াবও পাইবে।

মুয়াত্তা মালিক, ২৪৮

https://islamqa.info/bn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close