কয়েদখানার সেই নিয়মটি Leave a comment


জেলে ঢোকার সাথে সাথেই তারা আমার হাতে একটি হ্যান্ডবুক ধরিয়ে দিল। কভার পেজে লেখা ‘ইনমেইট হ্যান্ডবুক’।বইটিতে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম এটি একটি ৫০ পাতার জেলে অবস্থান সংক্রান্ত নিয়মকানুনের বই। জেলে থাকা অবস্থায় কি কি করতে হবে তার অনেক নিয়মই লেখা আছে বইটাতে। তার মধ্যে একটি নিয়ম এভাবে লেখা; “বিছানা টান টান করে গুছিয়ে রাখতে হবে যাতে একটু ও ভাঁজ না দেখা যায়।কম্বল সুন্দর করে ভাঁজ করে পায়ের কাছে গুছিয়ে রাখতে হবে।সকল কয়েদির বিছানা সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।”
কথাগুলো পড়ে আমার সালাফীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা মনে পড়ে গেল। সেটা হল আলস্যের প্রতি সালাফীদের মনোভাব। সালাফীগণ আলস্যকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতেন, অপছন্দ করতেন। আর সালাফীদের কাছে আলস্য মানেই ছিল কর্মবিমুখ থাকা, সময় নষ্ট করা।
উমর ইবনে খাত্তাব বলেন, “কোন ব্যক্তির কিছু না করে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করাকে আমি পছন্দ করিনা।”
ইবেন মাসুদ বলেন, “যে ব্যাক্তিকে আমি দ্বীন বা দুনিয়ার কোনো কাজে নিয়োজিত না থেকে অলস বসে থাকতে দেখি, তাকে আমি অপছন্দ করি।”
আল্লাহর রাসূল (সাঃ)যে সমস্ত দোয়া পড়ে দিন শুরু করতেন তার মধ্যে একটি দোয়া ছিল এমন যে দোয়ায় তিনি আলস্য হতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআআলার কাছে পানাহ চাইতেন।প্রকৃতপক্ষে, আলস্য এতটাই সুন্নাহ পরিপন্থি যে, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)তাঁর জীবদ্দশায় কখনই হাই ও তোলেননি। ইবনে হাযার এর বর্ণনা অনুসারে,“ নবীজি (সাঃ)জীবনে কখনও হাই তোলেননি।” (ইবনে আবি শায়বাহ এবং আল-বুখারীর ‘তারিখ’ এর মুরসাল আল ইয়াযিদ বিন আল-আসাম হতে গ্রহণকৃত)
তাই, আমার কাছে কারাগারের এই নিয়মটা উত্তম মনে হয়েছে। আপনি যতো ভোরে উঠে আপনার দিন শুরু করবেন, আপনি ততোটাই সজীব এবং আলস্য থেকে মুক্ত থাকবেন।আমার এতদিনের কারাগার জীবনের অভিজ্ঞতা আমাকে তাই শিখিয়েছে। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) যখন শামে গেলেন এবং হযরত মুয়াবিয়া কে আগের তুলনায় কিছুটা ধীর বা মন্থর পেলেন, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “এটা কি মুয়াবিয়া? তুমি কি ‘দুহার’ (পূর্বাহ্ন অর্থাৎ ফজর সালাতের পর) সময় ঘুমিয়ে কাটাও?” আমরা সালাফদের এহেন আচরণ যদি ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, তাঁরা সকলেই মাত্রাতিরিক্ত নিদ্রাকে ঘৃণা করতেন, বিশেষভাবে দিনের প্রথমভাগের নিদ্রা।    
সাখার আল গামিদির বর্ণনামতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মহান আল্লাহর কাছে তাঁর উম্মতকে ভোরে বরকত বা অনুগ্রহ দান করার জন্য দোয়া করেছেনতাই রাসুল (সাঃ) যে কোন অভিযানে সবসময় ভোরে বা প্রত্যুষে সৈন্য পাঠাতেন।সাখার নিজেও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং এ কারণে তিনি সবসময় প্রত্যুষে তাঁর কারবার শুরু করতেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ  তাঁকে অঢেল ধন্সম্পদের মালিক করেছিলেন।

আলি ইবনে আবু তালিব বলেন, “দিনের শুরুতে নিদ্রা যাওয়া হল মূর্খতার লক্ষণ।”

বুখারী ও মুসলিম, উভয়ের বর্ণনানুসারে, একবার একদল লোক ইবনে মাসুদের (রাঃ) সাথে  সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন। সময়টা ছিল ফজরের পর। বাসার সামনে গিয়ে অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও উনারা দাড়িয়ে ছিলেন, ঘরের ভেতর প্রবেশ করেননি। যখন ইবনে মাসুদ (রাঃ) তাদের এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তারা উত্তরে বললেন যে, এ সময় ওনার স্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতে পারেন বিধায় তারা ঘরে প্রবেশ করেনি। এটা শুনে ইবনে মাসুদ বললেন, “তোমরা কি  যে আমার পরিবারকে এতটাই উদাসীন মনে কর?” ইবনে মুফ্লিহ আল-হাম্বালি এতে মন্তব্য করে বলেন,“এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ফজরের পরের সময়টা অবজ্ঞা করা অনুচিত এবং এসময় নিদ্রা যাওয়া নিরুতসাহিত করা হয়েছে।”
একদা ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁর এক পুত্রকে দুহার (পূর্বাহ্ন) সময় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বলেছিলেন,“উঠে পড়! তুমি কি যে সময় আমাদেরকে রিযিক বন্টন করে দেয়া হয় সে সময় ঘুমিয়ে থাকতে চাও?”
তাবেঈনদের মাঝে একজন বলেছেন,“যখন কোন আলেম ফজর সালাতের পর ঘুমায়, তখন দুনিয়া তীব্র মনঃকষ্টে চীৎকার করতে থাকে।”
আমাদের পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণও এই বৈশিষ্ট্য এর অধিকারী ছিলেন। হযরত দাউদ (আঃ) তাঁর পুত্র সোলায়মান (আঃ) কে বলেছিলেন,“অধিক নিদ্রা থেকে বিরত থেকো, কারণ এটি তোমাকে দরীদ্র করে দিবে।”
এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) বলেন,“দুটি বিষয় আমি অত্যন্ত ঘৃণা করিঃ ১) দিনের বেলায় ঘুমানো তবে আগেরদিন রাত্রিজাগরণ করে থাকলে ভিন্ন কথা। ২) উচ্চস্বরে হাসা তবে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে হেসে থাকলে ভিন্ন কথা।”  
একজন কবি বলেছিলেন,“ বস্তুত, ফজরের পর ঘুমের অভ্যাস মানুষকে বিভ্রান্তি দ্বারা ক্লীষ্ট করে তোলে আর বিকালের নিদ্রা করে তোলে উন্মাদ।”
ইবনে মুফ্লিহ এসবকিছুর উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন,“অতএব, দিনেরবেলা নিদ্রা যাওয়া মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এটা শরীর থেকে শক্তি বের করে নেয় এবং মাংসপেশীকে ক্ষয় করে, কারণ মাংসপেশীকে সুঠাম রাখার জন্য দৈহিক কসরত প্রয়োজন।”
কয়েক মাস আগে আমাকে এই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমি এখন ম্যারিয়ন সিএমইউ কারাগারে আছি। আগে ছিলাম টেরেহট সিএমইউ তে। এখানে কয়েদীদেরকে হঠাত’’ করেই তাদের কয়েদখানা পরিবর্তন করা হয়, কোন রকমের পূর্বাভাস ছাড়াই। একদিন ভোর ৫ টায়, একজন গার্ড এসে আমার সেলের তালা খবুলে ভেতরে ঢোকে এবং জানায় যে আমার এই কয়েদখানায় থাকার মেয়াদ শেষ, আমাকে অন্য কয়েদখানায় যেতে হবে। সে আমার গোছগাছের জন্য মাত্র একঘন্টা সময় বেঁধে দেয়। তখন আমার খেয়াল হয় আমার অন্যান্য সাথঈ ভাইদের কথা, যাদের সাথে আমি এতদিন ছিলাম। হয়ত আজকের পর আর কখনই তাদের সাথে আমার দেখা হবেনা। তাই তাদের সাথে শেষ দেখা করবার ও সালাম বিনিময় করার জন্য আমি কয়েদখানার কালো করিডোর বরাবর হাঁটতে লাগলাম। ফজরের পরের এই সময়টাতে বেশীরভাগ কয়েদিই ঘুমিয়ে থাকে। যাই হোক, তবে বেশ কিছু সেলে আমি লাইট জালানো দেখতে পেলাম। কাছে যেতেই সেখান থেকে গুন গুন সুরে কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আরো ভালভাবে ভাইদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম, তাদের সবার চোখে মুখে তাহাজ্জুদ নামাজের চিহ্ন। 
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,“একজন মুমিনের মর্যাদা হল তাহাজ্জুদ নামাজে।”
তিনি আরো বলেছেন,“একজন মুমিন ইবাদাতকারী রাতের শেষ দুই তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। অতএব, তুমি যদি সেই সময় ইবাদতে শামিল হতে পারো, শামিল হও।”
 “প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আল্লাহতাআলা শেষ আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, আমিই সবকিছুর অধিপতি-কে আছ আমাকে ডাকবে এবং আমি তার ডাকে সাড়া দিব- কে আছে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে দিব-কে আছে আমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব-, এবং এভাবে আল্লাহপাক ফজর হবার সময় পর্যন্ত থাকেন।”
আল্লাহর রাসুল, আরো বলেন,“নিয়মিত তাহজ্জুদের নামাজে লেগে থাক, কারণ এটা পুর্ববর্তী নেককার বান্দাদের অভ্যাস, এটি তোমাকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেবে, তোমার পাপ মিটিয়ে দিবে, পাপ থেকে বিরত রাখবে এবং শরীর রোগমুক্ত রাখবে। ” ইবনে রজব এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন,“এই হাদিসের আলোকে জানা যায় যে তাহাজ্জুদ মানুষের শরীরকে সুস্থ্য রাখে, রোগশোক দূর করে দেয়।”
 “ইহসান হল এমনভাবে ইবাদত করা যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, আর যদি তা না পারো তাহলে মনে রাখবে যে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। ”
কারণ তাহাজ্জুদ সালাতে লোক দেখানো বা রিয়া হবার কোন সুযোগ নেই। এই কয়েদখানার সেলে গভীর রাতে কেউ দেখার নেই, শুধু আল্লাহ এবং আমি, আর কেউ না। এতে পার্থিব লাভের কোন ছিটে ফোটাও নেই। তাহাজ্জুদ সালাত মুমিনদের জন্য ফরয নয়। হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেছেন,“তাহাজ্জুদ হল সবচেয়ে মর্যাদাকর এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, এজন্যই মুমিনবান্দা শীতের রাতেও ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে, এবং এমন এক সত্ত্বাকে ইবাদাত করে যাকে সে দেখতে পর্যন্ত পায়না।”
আবু সোলায়মান আদ-দারানী বলেছেন,“যারা তাহাজ্জুদ আদায় করেন আর যারা খেল তামাশায় রাত পার করেন, তাদের উভয়ের মধ্যে তাহাজ্জুদগোজারই রাতের সময়টাকে পরিপুর্ণভাবে উপভোগ করতে পারেন। যদি তাহাজ্জুদ না থাকতো, আমার এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা থাকতোনা।”

আল ফুযায়েল ইবনে ইয়াদ বলেছেন,“তুমি যদি তাহাজ্জুদ আদায় ও দিনের বেলা সাওম পালনে ব্যর্থ হও তবে মনে রেখ, তুমি প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত, অচিরেই তুমি পাপ দ্বারা আবর্তিত হবে।”
সালাফদের মধ্যে একজন বলেন,“চল্লিশ বছর ধরে একমাত্র সুর্যোদয় ছাড়া কোন কিছুই আমাকে ভারাক্রান্ত করেনি ।( কারণ সুর্যোদয় মানেই হলো রাতের শেষ, অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সমাপ্তি।)”

তাঁরা বলেছেন তাহাজ্জুদ অবশ্যই একটি কঠিন ইবাদাত, কিন্তু তাঁদের ঈমানের জোরে তাঁরা তাহাজ্জুদগোজার হিসেবে আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভ করেছেন। এই চিন্তাধারা পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা হলে তারা এটিকে সম্পুর্ণ উদ্ভট বলে উড়িয়ে দিবে। কারণ পশ্চিমারা হল বস্তুবাদি এবং আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর। কিন্তু আসুন আমরা রাসুল (সাঃ)এর হাদিসটি লক্ষ্য করিঃ 
 “যখন তোমাদের কেউ ঘুমাতে যায়, তখন তার ঘাড়ে শয়তান তিনটা গিরা দেয়।প্রতিটা গিরা দেয়ার সময় শয়তান বলতে থাকে যে ‘তোমার সামনে অনেক লম্বা এক রাত পড়ে আছে। অতএব তুমি ঘুমাও’। এরপর যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জাগ্রত হয় এবং আল্লাহর নাম নেয়, তার একটি গিরা খুলে যায়। এরপর যখন সে ওযু করে তার দ্বিতীয় গিরাটিও খুলে যায়। আর যখন সে সালাতে দাঁড়ায় তখন শেষ গিরাটিও খুলে যায়। ফলে সে সকালে চনমনে, সজীব এবং ভাল মনমেজাজ নিয়ে উপনীত হয়। আর যদি সে এটা না করে তাহলে তার সকাল শুরু হয় আলস্য এবং তিরীক্ষি মেজাজ নিয়ে।”
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে হাযার বলেন,“ এই হাদিস দ্বারা এটা বোঝা যায় যে, তাহাজ্জুদের ভেতর মানুষের মনমেজাজ ভাল রাখার জন্য লুক্বায়িত কোন বিষয় রয়েছে।” এভাবে হাদিসের অন্যান্য উদাহরণ পর্যালোচনা করলেও আমরা এটা বুঝতে পারি।
আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,“আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কখনই তাহাজ্জুদের সালাত বাদ দিতেননা। তিনি যদি অসুস্থ থাকতেন, বসে সালাত আদায় করতেন।” এই অভ্যাস নবীজিকে শুধু দিনের বেলায় শক্তি যুগিয়েছেন তা নয়, ফলশ্রুতিতে উনি জীবনে একটি বারের জন্যও হাই তুলেননি।এবং প্রত্যেক যুদ্ধাভিযানে দিনের প্রথমভাগেই উনি অভিযান পরিচালনা শুরু করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইব্রাহীম বিন শাম্মাস বলেন,“আমি আহমদ ইবনে হাম্বাল কে অনেক অল্প বয়স থেকেই সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করতে দেখেছি।” আহমদ ইবনে হাম্বল ও তার সেই জীবন সম্পর্কে বলেছেন,“আমি খুব ভোরে উঠে হাদিস শোনার জন্য বের হতে চাইতাম, তখন আমার মা আমার কাপড় টেনে ধরে ফজর হওয়া ও অন্যান মানষের জেগে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতেন।’”
 [তবে যোহর এবং আসরের মাঝখানে কিছু সময় ক্বায়লুলা করা সুন্নত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বালের তাহাজ্জুদের সাফল্যের পেছনে এই সুন্নাহর নিয়মিত অনুশীলন ছিল অন্যতম কারণ। উনার পুত্র আব্দুল্লাহর বর্ণনা মতে,“শীত বা গ্রীষ্ম যাই হোক না কেন, আমার বাবা নিয়মিত ক্বায়লুলা করতেন। তিনি কখনই তা বর্জন করেননি। এবং আমাকেও তা করার জন্য উৎসাহ দিতেন। আর উমর ইবনে খাত্তাবের এই উক্তিটি বলতেন,‘ক্বায়লুলা কর, কারণ শয়তান ক্বায়লুলা করেনা।’ অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণনায়ও ক্বায়লুলার কথা এসেছে। আরেকটি অভ্যাস যা তাহাজ্জুদ সালাতে জাগতে সাহয্য করে, তাহল ঈশার সালাতের আগে না ঘুমানো এবং ইশার সালাতের পর অযথা কথা না বলে জেগে থাকা। কারণ রাসুল (সাঃ) ইশার সালাতের আগে ঘুমানো এবং এরপর অযথা কথা বলাকে অপছন্দ করতেন।”
আমাদের মাঝে অনেকেই মনে করেন তাহাজ্জুদ মানেই হল সারারাত জেগে সালাত আদায় করা।ব্যাপারটি আসলে তা নয়। কেউ যদি ফজর সালাতের ওয়াক্ত হবার আধা ঘন্টা আগে উঠেও মাত্র দুই রাকাত সালাত আদায় করে, সেটিও তাহাজ্জুদ হিসেবে গণ্য হবে।
যাইহোক, আমি যেখানে আছি সেখানে আমার দেখামতে খুব কম ভাইদেরকেই আমি দেখেছি তাহাজ্জুদে সালাতের উপর অবিরত আমল করে যেতে। আর যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদগোজার ছিলেন তারা অতিসাব্ধানে কথাবার্তা এবং সময় অতিবাহিত করতেন। তাঁদের দুনিয়ার প্রতি চাওয়াও ছিল অতি অল্প।
তাহাজ্জুদ সালাতের অভ্যাসই ইসলামের মূজাহিদদেরকে ইতিহাস তৈরী করতে সাহায্য করেছে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ইবনে কাসীর ইয়ারমুকের যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন,‘যখন রোমান সেনাবাহিনী মুসলিমবাহিনীর কাছে হেরে অপদস্থ হয়ে এন্টিওকে তাদের সম্রাটের কাছে ফিরে এসেছিল তখন তাদের সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাদের বলল, ধিক তোমাদের! যাদের কাছে তোমরা হেরে গেছ তারা কি তোমাদের ন্যায় মানুষ ছিলনা?!!’ 
তারা উত্তরে বলল, “জ্বী।”
হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, “সংখ্যায় কারা বেশী ছিল, তোমরা না তারা?”
তারা উত্তর দিল, “বরং আমরা তাঁদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ছিলাম।”
হিরাক্লিয়াস তখন জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কিভাবে তাঁরা তোমাদের হারিয়ে দিল?”
সম্রাটের এই কথা শোনার পর তাদের মধ্য থেকে একজন এককদম বের হয়ে উত্তর দিল, “কারণ তাঁরা রাত জেগে প্রার্থনা করে, সারা দিন সাওম পালন করে, তাঁদের ওয়াদা রক্ষা করে থাকে, ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে থাকে,তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভুতিশীল, আর আমরা মদ পান করি, ব্যাভিচারে লিপ্ত হই, নিষিদ্ধ কাজ করি, ওয়াদা ভঙ্গ করি, অপরকে অত্যাচার নির্যাতন করি, তাই করতে উৎসাহ দেই যা সৃষ্টিকর্তাকে রাগান্বিত করে, এবং অনুৎসাহিত করি এমন কাজ যা সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করে এবং পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার ছড়িয়ে দেই।”
হিরাক্লিয়াস বললেন,“তোমরা সত্য বলেছ।”—সমাপ্ত।
লেখক-তারিক মেহান্না- শুক্রবার, ৩রা রজব ১৪৩৫(2nd of May 2014), মারিওন সিএমইউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHOPPING CART

close