আব্দুস সামাদ সাহেবের অফিসের বস্ হলেন ইব্রাহীম সাহেব। সেই দিন এক মিটিং এর ফাঁকে তিনি বললেন, “আমরা ভাই আসলেই মুসলমান হিসেবে অনেক বোকা। আল্লাহপাক আমাদেরকে কোরআন দিয়েছেন বুঝে পড়ার জন্য, খালি মুখস্ত গলগল করে পড়ার জন্য নয়। কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ পড়লে না বোঝা যায়, কোরআন কত বিজ্ঞানময়, কত যৌক্তিক। আমাদের দেশে কিছু অশিক্ষিত হুযুর আছে, যারা এ ব্যাপারে উদাসীন, খালি সয়াবের চিন্তা, Qualityর কোন চিন্তা নেই।” কথাটা আব্দুস সামাদ সাহেবের খুব মনে ধরেছে। কারণ কথাটা খুবই যৌক্তিক। এতদিন তিনি শুধু কুরআন আরবী পড়েছেন, কখনো বাংলা পড়েননি। তাই তিনি ঠিক করলেন, আজ থেকে বাংলা পড়বেন। সেই দিন বাসায় ফিরে তিনি কুরআনের বাংলা পড়া শুরু করলেন।
বাংলা পড়া শুরু করে আব্দুস সামাদ সাহেব যার পর না চমৎকৃত হলেন! মহান আল্লাহপাক মানুষের জন্য এত কিছু এত সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন!!? মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সেই আয়াতগুলো ধীরে ধীরে আব্দুস সামাদ সাহেবের সামনে আসতে থাকে যে আয়াতগুলোতে আল্লাহপাক মুমীনের জীবনের বিভিন্ন মাত্রার পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। এভাবে পড়তে পড়তে আব্দুস সামাদ সাহেব কুরআনের মান্দন্ডে নিজেকে বিচার করা শুরু করলেন। কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নবী রাসুল, সৎ ব্যক্তিগণের জীবন অধ্যয়ন করে দেখলেন, তাদের কারোরই জীবন একেবারে পানির মত সরল ছিলনা। সবাইকেই আল্লাহপাকের কঠিন পরীক্ষার মাঝে নিজেকে প্রমাণ করে আসতে হয়েছে।সেই সাথে কুরআনে আল্লাহপাকের মানুষকে পরীক্ষা করা ব্যাপারে যে আয়াত গুলো আছে, সেগুলো ও আব্দুস সামাদ সাহেবের গোচরীভূত হয়েছে।
আব্দুস সামাদ সাহেব ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ কুরআনের মান্দন্ডে তিনি ঠিক নিজেকে খুজে পাচ্ছেন না। তাঁর জীবনে কোন ঝামেলা নেই, নেই কোন কষ্ট, কোন আক্ষেপ। সাধারণ ছিমছাম জীবন তাঁর। খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন তিনি। দেরী না করেই ছুটলেন মসজিদের ইমাম কাশেম সাহেবের কাছে। কাশেম সাহেবের কাছে তাঁর অনুভুতিগুলো তুলে ধরলেন।
আব্দুস সামাদ সাহেবের জীবনে কোন কষ্ট নেই, কোন পরীক্ষা নেই, তাঁর মানে কি তাঁর ইসলামে কোন অংশ নেই? তাঁর জন্য জান্নাত নেই?!!!
কাশেম সাহেব একটু স্মিত হেসে আব্দুস সামাদ সাহেবকে আশ্বস্ত করলেন। তিনি বললেন, “মুমিনের জন্য বিপদের দোয়া বা পরীক্ষায় পড়ার জন্য দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের রাসুল (সাঃ) ও আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন।” এরপর তিনি সুরা বাকারার ২৮৬ নং আয়াত পাঠ করে শুনালেন, যার অর্থঃ “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে।” প্রত্যেক মানুষের জন্য যে টুকু পরীক্ষা আল্লাহপাকের জন্য করা প্রয়োজন আল্লাহ সে টুকুই সে ভাবে করবেন। আল্লাহ সাধ্যের মধ্যে যতটুকু করার পরীক্ষা করে নিবেন।আল্লাহপাক জানেন কে কতটুকু পরীক্ষা দিলে ভালো মার্কস পেয়ে পাস করবে। নিজে যেচে পরে পরীক্ষা দিতে যাবেননা।হতে পারে আপনি যেচে পড়ে পরীক্ষা দিলে ফেল করতে পারেন। সবসময় আল্লাহতালার নিয়ামতের শুকরিয়া করবেন। আল্লাহর কাছে বেশী বেশী নিয়ামত চাইবেন সেই সাথে সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের তৌফিক চাবেন। আল্লাহপাক তো আমাদের কে কুরআনেই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন,
“رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِي”
“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।(46:15)”
আল্লাহতো আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলার দোয়া করতে বলেননি। আল্লাহপাক, বান্দা তাঁর প্রতি যেমন ধারনা করে, সেই রকম ই ব্যবহার বান্দার প্রতি করে থাকেন। আপনি আল্লাহর প্রতি সবসময় ভালো ধারণা রাখবেন। আল্লাহর রহমতের কথা চিন্তা করবেন। ইন শা আল্লাহ আল্লাহ আপনার অন্তরে প্রশান্তি দান করবেন।
কথাগুলো শুনে আব্দুস সামাদ সাহেব অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। আল্লাহর কাছে হেদায়েতের দোয়া করলেন। কাশেম সাহেবের জন্য ও দোয়া করতে ভুললেন না।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার শেয়ারে যারা যারা উপকৃত হবেন, তাদের সওয়াব আপনিও পাবেন।