আল্লাহ তাআলার আদেশ মেনে চলা ও তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে একজন মুসলিমকে যে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া উচিৎ, তা হল তার প্রাত্যহিক রুটিন৷ একজন মুসলিম কখন ঘুম থেকে উঠবে, রাতে কখন বিছানায় যাবে – এ সকল বিষয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে৷
হাদীসে বর্ণিত:
عَنْ صَخْرٍ الْغَامِدِىِّ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِى فِى بُكُورِهَا ». وَكَانَ إِذَا بَعَثَ سَرِيَّةً أَوْ جَيْشًا بَعَثَهُمْ فِى أَوَّلِ النَّهَارِ. وَكَانَ صَخْرٌ رَجُلاً تَاجِرًا وَكَانَ يَبْعَثُ تِجَارَتَهُ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ فَأَثْرَى وَكَثُرَ مَالُهُ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهُوَ صَخْرُ بْنُ وَدَاعَةَ
وَكَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ الْعِشَاءَ… وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا
অনেক ছাত্রদের ধারণা যে রাত জেগে লেখাপড়া করলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত৷ কেউ রাত্রিতে যথেষ্ট ঘুমিয়ে ভোরে উঠে সতেজ দেহ-মন নিয়ে দু-ঘন্টায় যতটুকু পড়া করতে পারবে, তা হয়ত রাত জেগে চার ঘন্টা লেখাপড়ার সমান৷
অনেকে অভিযোগ করেন যে রাত্রি জাগরণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আর এ অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না৷ এই অভ্যাস পরিবর্তনের সহজ উপায় আছে৷ কষ্ট করে কয়েকদিন ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে ওঠা এবং ফজরের সালাতের পর আর বিছানায় না যাওয়ার অনুশীলন করলে প্রথমে কষ্ট হলেও শীঘ্রই এটা অভ্যাসে পরিণত হবে৷ ফজরের পর ঘুম তাড়িয়ে রাখার জন্য প্রথমদিকে কিছু খেলাধূলা বা শারীরিক পরিশ্রম করা যেতে পারে৷ প্রয়োজনে অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য ছুটির সময়কে বেছে নেয়া যেতে পারে, যেন তা করতে গিয়ে কাজের ক্ষতি না হয়৷ মোটকথা ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব – এটি পরীক্ষিত৷
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে আরও থাকতে পারে দিনের শেষভাগে খেলাধূলা ও শরীরচর্চা৷ সাহাবীগণ দিনের শেষভাগে, এমনকি মাগরিবের সালাত আদায় করেও তীর-নিক্ষেপ চর্চা করতেন৷ দিনের শেষভাগে কিছুটা শরীরচর্চা, হাঁটা বা খেলাধূলা করা রাত্রিতে ঘুমকে গভীর করতে সহায়ক হবে৷ এছাড়া দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তো আছেই – যার প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য-কর্তব্য৷
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে আরও থাকা দরকার নিয়মিত দ্বীন-শিক্ষা ও কুরআন চর্চা৷ হঠাৎ বেশি পরিমাণে কোন আমল করার চেয়ে অল্প হলেও নিয়মিত আমল করাটা অধিক উপকারী এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়৷ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
« أَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ »
এই সমস্ত দিকনির্দেশনা মেনে প্রাত্যহিক রুটিন ঠিক করে নিয়ে তা অনুসরণ করলে একজন মুসলিম সহজেই যাবতীয় পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে পারবে এবং আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা তার জন্য সহজতর হবে ইনশা আল্লাহ৷
১ আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহের প্রণেতাগণ কর্তৃক বর্ণিত৷
২ বুখারী, মুসলিম৷
৩ বুখারী, মুসলিম৷