হাদিস নং ২১। ইসলাম কী?
হযরত আমর ইবনে আবসাহ হতে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে প্রশ্ন করলো, ” হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? ” রাসুল (সাঃ) উত্তর বললেনঃ
ইসলাম হল এই যে, তুমি তোমার ক্বলবকে সম্পুর্ণভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে, আর অন্য মুসলিম ভাই তোমার হাত ও মুখ থেকে নিরাপদে থাকবে।
মুসনাদে আহমদ, ১৬৬৯১, সহীহ
হাদিস নং ২২। অন্তরের পরিশুদ্ধি কাকে বলে?
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুয়াবিয়াহ হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি এসে রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, ” অন্তরের পরিশুদ্ধি কাকে বলা হয়?” রাসুল (সাঃ) বললেন,
যে অন্তর এটা জানে যে, মহান আল্লাহপাক তার সাথেই আছেন, সে যেখানেই থাকুক না কেন।
আল মু’যাম আল সাগীর, ৫২৮
হাদিস নং ২৩। সময়ের সাথে ঈমান ও পুরাতন হয়
হযরত আমর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেনঃ
কাপড় যেভাবে পড়ার কারণে পুরাতন হয়ে যায়, নিশ্চয় ঈমান ও সেরকম পুরাতন হয়ে যায়। অতএব, তোমরা আল্লাহর কাছে তোমাদের ঈমানকে পুনর্জীবিত করার ব্যাপারে যাচ্ঞা কর।
আল মুসতাদরাক,৫, সহীহ
হাদিস নং ২৪। মুমিনের জন্য সবচেয়ে উত্তম পুরস্কার
আবু ইসহাক হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
একজন মুমিনকে সবচেয়ে বড় যে নিয়ামত দান করা হয়, তা হল উত্তম চরিত্র, আর একজন ব্যক্তিকে নিকৃষ্ট যে বস্ত দেয়া হয় তা হল, সুন্দর অবয়বের পিছনে নিকৃষ্ট চরিত্র।
মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, ২৪৭৪৭, সহীহ
হাদিস নং ২৫। কুরআনের সাথে অন্তরের সম্পর্ক
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
যার হৃদয়ে কুরআনের কিছুই নেই সে বর্জিত ঘরের মত।
সূনান আত তিরমিজী, ২৯১৩, সহীহ
হাদিস নং ২৬। হিংসা ও ঈমান
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
ঈমানদার বান্দার অন্তরে ঈমান এবং হিংসা, এই দুটো জিনিস কখনই একত্র হতে পারেন।
সুনান আন নাসাঈ, ৩১০৯, সহীহ
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
লোভ এবং ঈমান, এই দুটি বস্তু কখনই ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে একত্রে বসবাস করতে পারেনা।
সুনান আন নাসাঈ, ৩১১০, সহীহ
হাদিস নং ২৭। কৃপণতা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুমিন ব্যক্তির মধ্যে দুটি স্বভাবের (চারিত্রিক দোষ) সমাবেশ হতে পারে নাঃ কৃপণতা ও চরিত্রহীনতা।
সূনান আত তিরমিজী, ১৯৬২, সহীহ লি গ্বাইরিহি
হাদিস নং ২৮। অন্তরের কালিমা
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবাহ করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)
সূনান আত তিরমিজী, ৩৩৩৪, সহীহ
হাদিস নং ২৯। জিহ্বার হেফাযত
ক্বুররাহ ইবনে ইয়াস হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
নিশ্চয়ই, মুখের বিনম্রতা, মিতাচার, স্বল্পভাষিতা (হৃদয়ের নয়) এবং নেক আমল, এ সবই ঈমানের অংশ। এগুলোর জন্য দুনিয়ায় ক্ষতি হলেও, আখিরাতে ফায়দা হয়ঃ আর আখিরাতে যে ফায়দা হয় তা দুনিয়ার ক্ষতির চাইতে অনেক অনেক বেশী।
আস সুনান আল কুবরা, ১৯১৬২, সহীহ
হাদিস নং ৩০। উত্তম সম্পদ কোনটি
সাওবান (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন
উৎকৃষ্ট সম্পদ হল (আল্লাহ তা’আলার) যিকরকারী জিহ্বা, কৃতজ্ঞ অন্তর ও ঈমানদার স্ত্রী, যে স্বামীকে দীনদারির ব্যাপারে সহযোগিতা করে।
সূনান আত তিরমিজী, ৩০৯৪, সহীহ
হাদিস নং ৩১। তাক্বওয়া হল ক্বলবে
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার বুকের দিকে ইশারা করেন এবং বলেন
তাকওয়া এখানে
মুসলিম শরীফ, ২৫৬৪, সহীহ
- Islamic Finder
- Islam House
- Search Truth
- Kalamullah
- Hadith of the Day
- Islam Religion
- Islamic Line
- দোআ ও যিকির (হিসনুল মুসলিম)
- আল হাদিস (Al Hadith)
- Bangla Hadith (বাংলা হাদিস)
- Quran Mazid (Tafsir & Word By Word)
- Al Quran (Tafsir & by Word)
হাদিস নং ৩২। পার্থিব চিন্তা
আবান ইবনে উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) দুপুরের সময় মারওয়ানের নিকট থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমাদের শ্রুত কতক হাদীস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ
পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ তার সবকিছু সুষ্ঠু করে দিবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাযির হবে।
ইবনু মাজাহ, ৪১০৫, সহীহ
হাদিস নং ৩৩। তাক্বওয়া হল ক্বলবে
আল মাদানী রহমাতুল্লাহ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে আমি আমার ক্বলবের উপর ছায়া অনুভব করি, এজন্য আমি আল্লাহর কাছে দিনে ১০০ বার ইস্তিগফার করে থাকি।
সহিঃ মুসলিম, ২৭০২
হাদিস নং ৩৪। নুরের দুয়া
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) এই বলে দুয়া করতেনঃ
হে আল্লাহ্! আপনি আমার অন্তরে নুর দিন, আমার শ্রবণ শক্তিতে নুর দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিতে নুর দিন, আমার জবানে নুর দিন, এবং আমাকে অনেক বড় নুর দিন।
মুসনাদে আহমদ, সহীহ, ৩২৯১
হাদিস নং ৩৫। কে প্রকৃত শক্তিশালী
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
সে শক্তিশালী নয় যে কুস্তিতে আরেকজনকে হারিয়ে দেয়, বরং সে শক্তিশালী যে তার অহংকার কে জয় করে।
মুশকিল আল আসার, ১৪২৬, সহীহ
হাদিস নং ৩৬। প্রকৃত সফলকাম কে?
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
সেই ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে নিয়েছে, যে রিযিক দেয়া হয়েছে তাই তার জন্য যথেষ্ঠ হয়েছে এবং আল্লাহ্ তাকে যাই দিয়েছেন তার উপর সে সন্তুষ্ট আছে।
সহীহ মুসলিম, ১০৫৪
হাদিস নং ৩৭। হিংসার ভয়াবহতা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে।
সুনানে আবু দাউদ, ৪৯০৩, সহীহ
হাদিস নং ৩৮। ক্ষমা করে দেয়া
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেনঃ
পরস্পরকে ক্ষমা করে দাও এবং পরস্পরের প্রতি গোস্বা মিটিয়ে ফেল।
মুসনাদ আল বাজ্জার, হাসান ১১৬৩
হাদিস নং ৩৯। আল্লাহর যিকিরশূন্য কথায় অন্তর কঠোর হয়ে যায়
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ্ তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বলো না। কেননা আল্লাহ তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বললে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর নিঃসন্দেহে কঠিন অন্তরের লোকই আল্লাহ তা’আলা থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে থাকে।
সুনান আত তিরমিজী, ২৪১১
হাদিস নং ৪০। সাহাবাদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর ভালবাসা
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমার সাহাবীগণের কেউ যেন তাদের অপরজনের কোন খারাপ কথা আমার নিকটে না পৌছায়। যেহেতু আমি তাদের সাথে পরিষ্কার ও উদার মন নিয়েই দেখা করতে ভালোবাসী।
সুনান আত তিরমিজী, ৩৮৯৬
হাদিস নং ৪১। সে ও ধ্বংস প্রাপ্ত
আমর ইবনে আবী হাবীব রাহমাতুল্লাহ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
সেই বান্দা ধ্বংস, যার অন্তরে আল্লাহতালা মানুষের প্রতি দয়া বা মহব্বত দান করেননি।
তারিখ দীমাস্ক, ১৯৮৬৩, হাসান
হাদিস নং ৪২। ক্বলব এর প্রকারভেদ
আবু সাঈদ রহঃ হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
মানুষের ক্বলব চার ধরণের হয়। চাকচিক্যময় অন্তর যা প্রদীপের ন্যায়, সীল করা অন্তর যাকে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হয়েছে, উলটানো পাত্রের ন্যায় অন্তর এবং জড়ানো অন্তর। চাকচিক্যময় অন্তর হল মুমিনের অন্তর, আর এর প্রদীপ হল ঈমানের নুর। সীল করা অন্তর হল কাফেরের অন্তর, উলটানো অন্তর হল পাক্কা মুনাফিকের অন্তর, কারণ তার কাছে দ্বীনের জ্ঞান আসা সত্তেও সে তা অস্বীকার করেছে। আর জড়ানো অন্তর হলো সেই অন্তর যে অন্তরে মুনাফিকি এবং ঈমান দুটোই বিদ্যমান। এই অন্তরের ঈমানের দৃষ্টান্ত হল পরিচ্ছন্ন পানিতে উৎপন্ন গাছের মতো, এবং এই অন্তরের মুনাফিক্বির দৃষ্টান্ত হল সেই ক্ষতের মতো যা দিয়ে পুঁজ ও দুষিত রক্ত নির্গত হয়; অতএব যার অন্তরে এই দুটি বিষয়ের যেটি বেশী শক্তিশালী, সেটিই তার উপর প্রবল হয়।
মুসনাদে আহ্মদ, ১০৭৪৫, যায়্যিদ
হাদিস নং ৪৩। অন্তর পরিশুদ্ধির দুয়া
হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল দোয়া করতেনঃ
হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ গুলো মাফ করে দিন, আমার অন্তর থেকে রাগ দূর করে দিন এবং ফিতনার গোমরাহী থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
আল দুয়া লিল তাবারানী, ১৩৪০, সহীহ